মূল পাতা রাজনীতি জাতীয় পার্টি সংসদে চমৎকার বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি
রহমত নিউজ 14 December, 2023 09:10 PM
‘জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করছেন না প্রধানমন্ত্রী। যে কোন সময় তারা নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে’ – এ রকম খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর থেকে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নতুন কৌতূহল তৈরি হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারপরেও তাদের নিয়ে সন্দেহ কেন? এই সন্দেহের কোন ভিত্তি আছে কি না সেটিও নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সাথে কথা বোঝা যাচ্ছে, তারা বেশি আসনে জয়ের নিশ্চয়তা চায়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চাহিদা মতো আসন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়তে চায় না। জাতীয় পার্টির অনেক নেতা নির্বাচনে জয়লাভের গ্যারান্টি চান। সেজন্য আওয়ামী লীগের সাথে আসন ভাগাভাগি করার দিকে তাদের মনোযোগ বেশি। গত কয়েক সপ্তাহে জাতীয় পার্টির সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেসব আলোচনা চলছে সেটি মূলত আসন ভাগাভাগি নিয়ে। এমনটাই বলছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। একতরফা নির্বাচন, গ্রহণযোগ্যতা কিংবা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জাতীয় পার্টিকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না।
আসন ভাগাভাগির বিষয়টিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, আসন ভাগাভাগির ব্যাপারটা মিথ্যাও বলবো না সত্যও বলবো না, মাঝামাঝি বলবো।
নির্বাচন থেকে সরে আসার কোন ইচ্ছা বা আগ্রহ জাতীয় পার্টির নেই। যত বেশি সম্ভব সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে যাবার জন্য জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমরা এই ভোটে অংশ নিয়েছি বেশি সংখ্যক এমপি তৈরি করার জন্য। যেন সংসদে আমরা জোরালো ভূমিকা রাখতে পারি বিরোধী দল হিসেবে। জাতীয় পার্টি ৪০ থেকে ৬০টি আসন নিয়ে সংসদে গেলে একটা ‘চমৎকার বিরোধী’ দল হবে। এখন নির্বাচন বর্জনের মতো কোন পরিস্থিতি জাতীয় পার্টি দেখছে না। একই সাথে নির্বাচন নিয়ে পুরোপুরি ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি। যদি আমরা দেখি যে কোনভাবেই ভালো এমপি বানাতে পারছিনা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই তখন হয়তো বা অনেকেই বর্জনের দাবি উঠাবে।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে - জেনারেল এরশাদ প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করতে না চাইলেও - জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সাথে থাকতে হয়েছিল। সে সময় দলটির নেতাদের অনেকের কথায় সেই অস্বস্তির কথা চাপা থাকেনি। তখন দলটিকে ঘিরে নানা ধরনের তৎপরতা দেখা গিয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। একাদশ সংসদেও আওয়ামী লীগের সাথে থেকে জাতীয় পার্টি ২২টি আসন নিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসেছে। কিন্তু ২০১৪ সালের পর প্রধান বিরোধী দল হলেও দলটির কয়েকজন নেতা মন্ত্রী ছিলেন যা রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক সময় হাসি তামাশারও খোরাক হয়েছিল।
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সাথে থাকতেই হবে। কারণ, গত এক দশকে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো মধ্যস্থতা করেছেন নয়তো হস্তক্ষেপ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে গাঁটছড়া বাঁধা ছাড়া কোন গতি নাই। শেখ হাসিনা জানে যে জাতীয় পার্টির ভাগ্য আওয়ামী লীগের দাক্ষিণ্যের উপরে নির্ভর করছে। কানাঘুষা হচ্ছে যে জাতীয় পার্টি ৩৫ থেকে ৪০টি আসন চায়। শেখ হাসিনা হয়তো এতোটা দেবেনা। এজন্যই হয়তো এ ধরণের কথা বলে থাকতে পারে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারবে না।
অনেকে মনে করেন, নির্বাচনে যাবার শর্তে ক্ষমতাসীনরা রওশন এরশাদের পরিবর্তে জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টিতে সামনে এনেছে।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কোন সমঝোতা হয়েছে কী না সেটি নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে তাদের সাথে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, তাদের ইচ্ছার সাথে আমাদের ইচ্ছার কোন দ্বিমত নেই, জাতীয় পার্টির নেতারা কিছু নীতিগত বিষয় আলোচনা করেছে এবং সেটার 'ইতিবাচক ও সম্মানজনক' সমাধান হবে। আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগি নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। যত কথার জাল ছড়ানো হচ্ছে সেটার ভিত্তি নেই, এগুলো অমূলক। অচিরেই সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় পার্টির উপায় নেই- এমন কথা মানতে নারাজ মজিুবল হক চুন্নু। তিনি মনে করেন, বিষয়টি ঠিক এর উল্টো হতে হতে পারে। এটা অনেকে বলেন, বলতে পারেন। এটা পারসেপশন আছে এ কারণে যে আমরা বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের সাথে জোট-মহাজোট করেছি। সেজন্য অনেকে আওয়ামী লীগের উপর আমাদের নীর্ভরশীলতা অনুমান করেন। আমি যদি অন্যভাবে বলি - আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড়া চলতে পারেনা। এটা এভাবে বলা যায়না? বিএনপিও জাতীয় পার্টিকে চায়। জাতীয় পার্টিকে পায়না বলে তারা সমালোচনা করে।
অনেকে মনে করেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে চাইবে জাতীয় পার্টিকে সেভাবেই চলতে হবে। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব যদি নির্বাচন থেকে সরে আসতে চাইলেও সেটি সম্ভব হবেনা বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। সেক্ষেত্রে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন সৃষ্টির আশংকা রয়েছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি চায় নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আমরা নির্বাচন করতে এসেছি। নির্বাচন থেকে চলে যাবার জন্য নাটক করতে আসি নাই, বিশ্বাস ভঙ্গ করার মতো কোন কাজ জাতীয় পার্টি করেনি। তারা সবাইকে বিশ্বাস করেন।
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছেন। সে বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন যাতে জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগি না করা হয়। এমন কথা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে চুন্নু বলেন, উনি দলে কেউ না, প্রধান পৃষ্ঠপোষক অলংকারিক পদ। দলে সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়ে সাংগঠনিক-ভাবে ওনার কোন সুযোগ নেই। আমি জানিনা এক দলের বিষয়ে আরেক দলের কাছে নালিশ চলে কি না সেটা আমার জানা নেই। এটা রাজনৈতিক কোন সংজ্ঞায় পড়ে কি না সেটা আমার নতুন করে স্টাডি করতে হবে।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তারা চেয়েছিলেন রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। ৩০ শে নভেম্বর নির্বাচনের ট্রেনে বা নির্বাচনের খেলায় মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে ওনারা নির্বাচনের স্টেডিয়ামের বাইরে চলে গেছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যেসব অবিশ্বাসের খবরা-খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন চুন্নু। তিনি বলেন এ ধরণের খবর প্রকাশিত হবার পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে জাতীয় পার্টির নেতাদের বৈঠক হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। বিশ্বাস-অবিশ্বাস যারা বলেছেন তারা বুঝবেন। তবে গতরাতেও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতার সাথে আমরা অনেকক্ষণ আলাপ করেছি খোশগল্প করেছি, বিশ্বাস না করলে কারও বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এতো আলাপ করে খাওয়াইতেন না নিশ্চয়ই।